লিচুর রাজ্য ঈশ্বরদীতে
আমাদের গ্রামের রাস্তার দুধারে যত দুর চোখ যায়, শুধু লিচু বাগান চোখে পড়বে, অন্য কোন ফল বাগান বা ফসল খুব একটা দেখা যায় না। লিচুর যখন মুকুল আসে তখন মৌমাছিরা ভিড় করে মধু সংগ্রহের জন্য। এই লিচুর মধুর ও ভাল চাহিদা রয়েছে , তাই ছোট ছোট মধু ব্যবসায়ীরা অনেক মৌমাছির বাক্স নিয়ে মধু সংগ্রহে নেমে পড়ে। এই মৌসুমে চারিদিকে শুধু লিচুর লাল আভা বিরাজ করে। থোকায় থোকায় লাল লিচুর ভারে ডাল গুলো অনেকটা নুয়ে পড়ে, তখন বাঁশ বা অন্য কোন লাঠি দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয় যাতে ডাল গুলো ভেঙ্গে না যায়। এই এলাকার প্রায় সবারই একটা করে লিচু বাগান আছে কিন্তু বাগান মালিকরা লিচু বড় করা পর্যন্ত অপেক্ষা করে না। লিচুর মুকুল এলেই বিক্রি করে দেয়, মূলত সিজনাল অনেক ব্যবসায়ী আছে যারা এই বাগান গুলো কিনে নিয়ে লিচু বড় করে। লিচু পাকা শুরু হলে বাগান পাহারা দিতে হয় বাদুর এবং চোরের উপদ্রপ ঠেকাতে। এই সময় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাক ভরে ভরে লিচু কিনে নিয়ে যায়।
আমাদের এখানে (ঈশ্বরদী, পাবনা) মূলত দুই ধরনের লিচু বেশী পাওয়া যায় এক হচ্ছে, আঁটি লিচু যেটার ভিতরের বীজ বড় থাকে এবং শাঁস কম থাকে , দুই, বম্বেই লিচু যেটার বীজ খুব ছোট হয় কিন্তু শাঁস বা খাবার যোগ্য অংশের পরিমাণ বেশী থাকে। চায়না -৩ নামে আর এক জাতের গোল আকৃতির লিচু পাওয়া যায় যদিও কম পরিমাণে । প্রায় সব লিচু গুলোই স্বাদে খুব মিষ্টি , রসালো এবং সুগন্ধযুক্ত হয়। লিচু সাধারণত পাকে মে মাসের দিকে আর পাওয়া যায় জুন মাস পর্যন্ত অবশ্য চায়না - ৩ লিচু নাবি জাত হওয়ার কারণে জুলাই মাসেও পাওয়া যেতে পারে । লিচু পাড়ার পরেই গুটি কলম বাধা হয় বাগান বড় অথবা বিক্রি করার জন্য।
এখন লিচুর ভরা মৌসুম । করোনা ভাইরাস এর কারণে এবার গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি। কিন্তু আমাদের গ্রাম কে খুব মিস করছি। ছোট বেলায় যখন লিচু খেতে ইচ্ছা হত, তখন গাছ থেকে অনেক গুলো ডাল সহ লিচু ভেঙ্গে গোল হয়ে বসে সবাই মিলে খেতাম। গত বছর গুলোতে আমার কাছের বন্ধ- বান্ধব, কলিগদেরকেও আমাদের বাগানের ফ্রেশ লিচু খাইয়েছিলাম এবার পারব কিনা আল্লাহ্ তায়ালাই ভাল জানেন।
No comments: